ঈদ উৎসবে যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের
ডা. নাজমা আক্তার
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম
ঈদুল আজহা আসন্ন। আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় মুসলিমরা সাধ্যমতো পশু কুরবানি করেন। স্বাভাবিকভাবেই ঘরে ঘরে চলে মাংসের নানা পদের বাহারি ভোজন। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস ও লবণের ব্যবহার আমাদের সবার স্বাস্থ্যের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। ঘরে ঘরে মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল, ঘি, মসলায় রান্না করা মাংসের নানা পদের আয়োজন সপ্তাহব্যাপী চলে। আর ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত দৈনন্দিন ক্যালোরি মেপে খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হয়। এ ঈদ আয়োজনে তাদের খাদ্য তালিকায়ও প্রভাব পড়ে। যার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ওপরও। তাই বলে কি একজন ডায়াবেটিস রোগী ঈদ আয়োজনে শামিল হতে পারবেন না? কিছু খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ম মেনে চললে তারাও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ঈদ উৎযাপনে শামিল হতে পারবেন-
* নিয়মিত রক্তের সুগার চেক করুন
বছরের অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উৎসবগুলোতে বাড়িতে গ্লুকোমিটারের মাধ্যমে রক্তের সুগারের মাত্রা একাধিকবার চেক করতে হবে। প্রয়োজনে সুগারের মাত্রানুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনসুলিনের মাত্রা পূর্ণ নির্ধারণ করুন।
* পরিমিত আহার করুন
উৎসবের দিনগুলোতেও ক্যালোরি মেপে আহার করুন। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট সম্পৃক্ত খাবার যেমন-পোলাও, খিচুড়ি, মিষ্টান্ন, তেহারি, বিরিয়ানি ইত্যাদি।
* স্বাস্থ্যকর রন্ধন প্রণালি অনুসরণ করুন
রান্নায় অতিরিক্ত তেল, ঘি, মাখন বা মসলা ব্যবহার না করে বরং অলিভ অয়েল বা সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া পরিহার করে বেকিং বা গ্রিল্ড পদ্ধতিতে রান্না করুন।
* প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। যেমন-মটরশুঁটি, ডাল, শিমজাতীয় শস্য ইত্যাদি।
* স্বাস্থ্যকর মিষ্টান্ন : সচারচর যেসব মিষ্টান্ন রক্তে সুগার বৃদ্ধি করে তা পরিহার করুন। ডেজার্টে রাখুন-টকদই, এক মুঠো বাদাম, ফলের সালাদ ইত্যাদি।
▶ পরিবারের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সদস্যের কথা মাথায় রেখে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করুন। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা সবার জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে।
▶ যতই উৎসবের দিন হোক না কেন, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে সবজি, সালাদ, ইত্যাদি থাকতে হবে। যা আঁশযুক্ত, ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজের আদর্শ উৎস।
* কোমলপানীয় নির্বাচনে সতর্কতা
অতিরিক্ত সুগারযুক্ত কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস বা ফলের জুস পরিহার করুন। তার পরিবর্তে চলতে পারে ডাবের পানি, গ্রিন টি, আদা চা। এ গরমে যথেষ্ট ও পরিমাণমতো পানি পানের ব্যাপারটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
* অতিরিক্ত ভোজন পরিহার
যখন আপনার ক্যালোরি অনুযায়ী খাবার খাওয়া হয়ে যাবে, তখনই আপনি টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ুন। সাধারণত এ ধরনের উৎসবে সবার সঙ্গে বসে অতিরিক্ত ভোজন হয়ে যায়, কারোর অনুরোধে খাদ্য তালিকার বাইরে অতিরিক্ত ভোজন করবেন না।
* দৈনন্দিন ব্যায়াম বা হাঁটার কথা ভুলবেন না
অনেকেই মনে করেন উৎসবের দিনগুলোতে অন্যান্য দিনের মতো ব্যায়াম বা না হাঁটলেও চলবে। কিন্তু যেহেতু এ সময়গুলোতে অতিরিক্ত ভোজন বা অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে রক্তে সুগার বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ে, তাই অন্যান্য দিনের মতো এ উৎসবেও নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।
* প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণের সময় অপরিবর্তিত রাখুন
অন্যান্য দিনের মতো উৎসবের দিনগুলোতেও দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা ও খাদ্য গ্রহণের সময়সূচি মেনে চলুন। দিনের বেলাতে অতিভোজন হয়ে গেলে রাতের খাবার হালকা রাখুন।
* প্রতিদিনের ওষুধ গ্রহণে অবহেলা নয়
উৎসবে সারা দিন ডায়াবেটিসের রোগীরাও ঘরে বা বাইরে ব্যস্ত সময় পার করেন। তাই বলে প্রতিদিনের ওষুধ গ্রহণে অবহেলা করলে চলবে না। সময়মতো ডায়াবেটিস বা অন্যান্য ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে।
ঈদ উৎসব সর্বজনীন। যথাযথ নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে একজন ডায়াবেটিস রোগীও অন্য সবার মতো ঈদ উৎসবে শরিক হতে পারেন। নিয়ন্ত্রিত খাদ্য তালিকা, দৈনন্দিন ব্যায়াম বা হাঁটা, নিয়মিত রক্তে সুগার পরিমাপ ও নিয়ম মতো ওষুধ সেবনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ঈদও অন্যদের মতো আনন্দময় ও বর্ণিল হতে পারে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস রোগ বিভাগ, মার্কস মেডিকেল
কলেজ ও হাসপাতাল. মিরপুর, ঢাকা।